স্বাস্থ্য প্রচারাভিযান

সবাই মিলে - একসাথে সুস্থ থাকি - সচেতন হই

টুলকিটটির এই অংশে আমরা কারখানার মালিকপক্ষ ও ব্যবস্থাপকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।

এখানে কারখানার কর্মীদের “স্বাস্থ্য ও সুস্থতার” বিষয়ে কিছু পদক্ষেপের কথা বলা হয়েছে, যেগুলো কারখানার মালিকপক্ষ নিজেদের উদ্যোগে, নিজেস্ব অভ্যন্তরীণ অর্থায়নে, নিজেস্ব লোকজনকে নিয়ে যেমন -কারখানার স্বাস্থ্যকেন্দ্রের কর্মী – চিকিত্সক ও নার্স, কারখানার ওয়েলফেয়ার এবং কমপ্লায়েন্স অফিসারদের সহোযগিতায় নিজেরাই আয়োজন করতে পারবেন। অথবা কারখানার কর্মীদের অংশগ্রহণের মাধ্যমেও “স্বাস্থ্য ও সুস্থতা” বিষয়ক প্রোগ্রামের কথা ভাবতে পারেন। প্রয়োজনে আয়াত এডুকেশন আপনার পাশে থাকবে।

আমরা জানি পোশাক শিল্প কারখানার শ্রমিক বা কর্মীরাই এর প্রাণ। তাদের সুস্থতাই কারখানার উৎপাদন বৃদ্ধি তথা এর উন্নয়নে বড় ভূমিকা রাখে। সুতরাং এই বিষয়ে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের সমর্থন লাভ অতি প্রয়োজন। বিষয়টিতে সচেতনতা তৈরির জন্য, মালিকপক্ষ, নীতিনির্ধারক, সেবাপ্রদানকারী এবং সেবাগ্রহণকারী উভয় পক্ষকে একত্রিত করে, এর প্রচারণা ও সমর্থন লাভের মাধ্যমে–বিভিন্ন কৌশল বা পদ্ধতি গ্রহণ করা যেতে পারে।

টুলকিট-এর ব্যবহারঃ এই লক্ষ্যে আমাদের ডিজিটাল টুলকিটটি প্রয়োজনীয় “স্বাস্থ্য ও সুস্থতা” বিষয়ক তথ্য সংগ্রহ করেছে। সামগ্রিকভাবে এটি কারখানার কর্মীদের সুস্থতায় ও রোগবালাই – উপসর্গ, সাবধানতা, চিকিৎসা ও আরোগ্য লাভ  বিষয়ে তথ্য দেওয়া আছে। তেমনই মালিক ও ব্যবস্থপনা পক্ষের জন্যও কিছু পরামর্শ দেওয়া আছে। যা পরবর্তীতে   বিজিএমইএ সহ (BGMEA) প্রতিটি পোশাক কারখানার জন্য একটি ভালো উদ্যোগ (Good Practice Model) হিসেবে পরিচিতি পাওয়ার সহায়তা দিবে।      

স্বাস্থ্য ও সুস্থতা বিষয়ক প্রচারণার – আয়োজন:

কারখানার ব্যবস্থাপনার (factory management) উদ্যোগে পোশাক শিল্পের কর্মীদের সার্বিক সুস্থতাকে লক্ষ্য করে কারখানার নিজ নিজ প্রাঙ্গনে হেলথ ক্যাম্পেইন বা “স্বাস্থ্য ও সুস্থতা” বিষয়ক প্রচারণাগুলো আয়োজন করা হয়ে থাকে। প্রথম লক্ষ্য হলো কর্মীদের স্বাস্থ্য এবং সুস্থতার উন্নতি সাধন ও তাদের স্বাস্থ্য সচেতন করা। এর জন্য স্বাস্থ্য ও সুস্থতা বিষয়ক তথ্য বার্তা, শিক্ষামূলক  আলোচনা ও তাৎক্ষণিক কিছু স্বাস্থ্য সেবা (প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরীক্ষা- যেমন: ডায়াবেটিস, শরীরের তাপমাত্রা, রক্তচাপ, অক্সিজেনের মাত্রা, ওজন ইত্যাদি) এবং চিকিৎসকের পরামর্শ প্রদান। স্বাস্থ্য পরীক্ষাগুলোর মাধ্যমে  ‘সতর্কীকরণ’ (alert) কেসগুলো” শনাক্ত করণের মাধ্যমে চিকিৎসকের কাছে  প্রয়োজনীয় চিকিৎসা এবং পরবর্তী ব্যবস্থা করা হয়। কিছু কিছু ক্ষেত্রে– পরবর্তী  ধাপের চিকিৎসার জন্য বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক এবং প্রয়োজনে হাসপাতালে রেফার করা হয়। এই প্রচারণাটি স্বেচ্ছাসেবক, স্বাস্থ্যকর্মী- (নার্স এবং চিকিত্সকগণের) পাশাপাশি কারখানার স্বাস্থ্য কেন্দ্র, কর্মী কল্যাণ ও কমপ্লায়েন্স কর্মকর্তাবৃন্দের সমন্বয়ে বাস্তবায়ন করা হয়। সবার অংশগ্রহণের মাধ্যমে  এটি  কারখানাটিতে  একটি উৎসবমূখর পরিবেশ সৃষ্টি করে। এই ক্যাম্পেইনগুলোর মাধ্যমে কর্মীদের স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের পাশাপাশি, কর্মী ও অন্যান্য কর্মকর্তাদের স্বাস্থ্য সচেতনতার ক্ষেত্রে একটি জোড়ালো ভূমিকা রাখে। এর মাধ্যমে মালিক পক্ষ ও কারখানার শ্রমিকদের মধ্যে পারস্পরিক আস্থা ও শ্রদ্ধার সম্পর্ক তৈরি হয়। যা শেষ পর্যন্ত কারখানার উৎপাদন বৃদ্ধিতে অবদান রাখে। সাধারণত তৈরি পোশাক কারখানাগুলো একএকটি ব্যস্ততম জায়গা। যেখানে নির্দিষ্ট উৎপাদন লক্ষ্য অর্জনে প্রতিটি শ্রমিককে প্রতি সেকেন্ড হিসেব করে কাজ করতে হয়। সুতরাং,  প্রতিষ্ঠানের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধিতে বা এর লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে কর্মীদের সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি। তাই প্রতিটি তৈরি পোশাক কারখানায় প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য সেবার সুযোগ থাকা অত্যন্ত জরুরি। বিজিএমইএ’র (BGMEA) অধীনে কারখানারগুলোর মধ্যে বেশ কয়েকটি পোশাক কারখানায় ‘ স্বাস্থ্য ও সুস্থতা” বিষয়ক প্রচারণাগুলো আয়োজন – উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।

কারখানার কর্মীদের স্বাস্থ্য ও সুস্থ্যতা নিশ্চিতকরণের যে ধাপগুলো অনুসরণ করা হয়:  

  • কর্মীদেরস্বাস্থ্য সম্পর্কিত জরিপ/তথ্য সংগ্রহ: এর প্রথম ধাপটি হলো কর্মীদের স্বাস্থ্য সম্পর্কিত জ্ঞান, মনোভাব, এবং তাদের দৈনন্দিন জীবনের স্বাস্থ্যকর অভ্যাসগুলো, সচেতনতার মাত্রা- এসবের উপর জরিপ (survey) পরিচালনা করা। এবং পরবর্তীতে সেই জরিপের ফলাফলের ভিত্তিতে একটি হেলথ ক্যাম্পেইন মডেল তৈরি করা হয়।
  • স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে আছে এমন স্বাস্থ্য সমস্যাগুলোকে প্রথমে প্রাধান্য দেয়া হয়।

স্বাস্থ্য পরীক্ষা কারখানার সমস্ত শ্রমিক এবং কর্মকর্তাদের জন্য প্রযোজ্য।

  • কিন্তু নারীদের স্বাস্থ্য সমস্যাগুলো ভাইটাল হেলথ চেকআপ এর মাধ্যমে আলাদা করে স্ত্রী-রোগ বিশেষজ্ঞ বা গাইনোকোলজিস্টের কাছে হস্তান্তর করা হয়। স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে আছে এমন কর্মীদের স্বাস্থ্য সমস্যাগুলোকে আলাদা বা এলার্ট কেস হিসেবে অগ্রাধিকার দিয়ে চিকিৎসকের কাছে পাঠানো হয়।
  • জটিল ও দীর্ঘমেয়াদী অসুখ বহন করছেন যেসব কর্মী, তাদের উন্নত চিকিৎসা সেবার প্রয়োজন হলে রেফারেল সেবা প্রদান করা হয়।
  • লাইন সুপারভাইজারদের জন্য সাধারণ স্বাস্থ্য সমস্যা বিষয়ে স্বাস্থ্য শিক্ষা বিষয়ক সেশন পরিচালনা করা, এটির উপর গুরুত্ব দেয়া, যাতে ওরা পরবর্তীতে তাদের সহকর্মীদের সঙ্গে আলোচনা করতে পারেন।

 

  • তথ্য ও যোগাযোগের উপকরণ: স্বাস্থ্য সম্পর্কিত কিছু প্রয়োজনীয় বিষয়ের উপর স্বাস্থ্য বার্তাসহ পোস্টার এবং লিফলেট তৈরি করা হয় এবং সেগুলো কারখানার দৃশ্যমান জায়গায় টাঙিয়ে দেয়া হয়। শ্রমিকদের স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের লক্ষ্যে কারখানার অভ্যন্তরে বুথ (টেবিল) স্থাপন করা হয়।
  • স্বাস্থ্য শিক্ষামূলক আলোচনা ও টুলকিটের ব্যবহার: এখানে দৈনন্দিন ও ঋতু নির্ভর রোগবালাই, সাধারণ ও বিশেষ রোগ সম্পর্কে কর্মীদের জানানো এবং প্রতিরোধের উপায়গুলো সম্পর্কে অবগত করা হয়। এ কাজে পোষাক শিল্পের কর্মীদের স্বাস্থ্য-সুস্থতা বিষয়ক একটি বিশেষ তথ্য ভান্ডার (Digital Toolkit) -এর ব্যবহার করা হয়। এতে অংশগ্রহণের জন্য কর্মীদের অবহিত করা এবং স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণ করতে উত্সাহিত করা, এবং লাইন সুপারভাইজারদের জন্য বিশেষ স্বাস্থ্য শিক্ষা সেশনের ব্যবস্থা করা হয়।
  • স্বাস্থ্য ও সুস্থতার প্রচারণা- পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন: কারখানার মালিক ও ব্যবস্থাপনা পক্ষকে বছরে অন্তত দুইবার স্বাস্থ্য প্রচারণার আয়োজন করার পরামর্শ দেওয়া হয়।
  • বাজেট ও অর্থ সংস্থান: বরাদ্দকৃত বাজেটসহ প্রচারাভিযান অনুষ্ঠান আয়োজনের জন্য একজন সমন্বয়কারী নির্বাচন।
  • দল গঠন: পুরো ক্যাম্পেইনে স্বাস্থ্য সেবা প্রদানে স্বেচ্ছাসেবক, নার্স এবং চিকিত্সকদের উপস্থিতি নিশ্চিত করা। অনুষ্ঠানস্থলের চারপাশে সেবার জন্য টেবিল বা স্টল স্থাপন, চিকিৎসা উপকরণের ব্যবস্থা এবং প্রচারের উপকরণ দিয়ে ভেন্যু সাজানো। নার্সিং স্টাফ এবং চিকিত্সকদের নিযুক্তি (মোট কর্মীদের সংখ্যার উপর নির্ভর করে) এবং অনুষ্ঠানের সময়সূচি ঘোষণা করা। নারী ও পুরুষ কর্মীদের কথা মাথায় রেখে ক্যাম্পেইনগুলোতে নারী এবং পুরুষ উভয় ডাক্তারের উপস্থিতি নিশ্চিত করা।
  • ভেন্যু প্রস্তুত করা: অনুষ্ঠানস্থলের জন্য কিছু প্রাসঙ্গিক এবং উপযুক্ত তথ্য এবং যোগাযোগ উপকরণ (PVC) ও স্থাপন করা। প্রচারাভিযানের সমন্ধে প্রয়োজনীয় তথ্য ও প্রোগ্রাম সিডিউলসহ ব্যানার প্রস্তুত ও স্থাপন করা। লাইন সুপারভাইজারদের জন্য পর্যায়ক্রমিক স্বাস্থ্য বিষয়ক আলোচনা এবং স্বাস্থ্য শিক্ষা বিষয়ে চর্চা করা (সহকর্মীদের সাথে ভাগ করে নেওয়া) একটি ভাল অভ্যাস, তাছাড়াও  যেকোনো উদ্বেগজনক স্বাস্থ্য সমস্যার প্রাদুর্ভাবের বিষয়ে সচেতনতা তৈরি করতে ও  ঋতুভিত্তিক স্বাস্থ্য সমস্যাগুলোর উপরও বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয়।
  • ডেটা/তথ্য সংরক্ষণঃ স্বাস্থ্যসুস্থতা প্রচারণার শেষে, সংরক্ষিত তথ্যাবলীর মধ্যে কর্মীদের স্বাস্থ্য সমস্যার ধরণ, সেবাগ্রহণকারীর সংখ্যা, নারী-পুরুষ সেবা গ্রহিতার সংখ্যা ও তাদের অনুপাত, স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে আছে এমন সেবা গ্রহিতার সংখ্যা, সেবা গ্রহিতাদের বয়স, ও মন্তব্য ইত্যাদি নথিভুক্ত করা । এই সময়ে প্রতিদিনের স্বাস্থ্য সেবা প্রদানের তথ্যাবলী সংগ্রহ করা হয়। প্রাপ্ত তথ্যাবলীগুলো বিশ্লেষণের মাধ্যমে পরবর্তীতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়। যার মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট কারখানার কর্মীদের স্বাস্থ্যগত অবস্থার একটি সার্বিক চিত্র পাওয়া যায়। যা কারখানার মালিক পক্ষকে পরবর্তীতে ভবিষ্যত কর্ম নির্ধারণে সহায়তা করে।    

 স্বাস্থ্যকর পরিবেশ ও কর্মীদের উৎপাদনশীলতাই কারখানা উন্নতির চাবিকাঠি, কারণ যখন কর্মীরা সুস্বাস্থ্যের অধিকারী থাকেন তখন এটি কর্মীর অনুপস্থিতির হার কমিয়ে দেয় এবং কারখানার উৎপাদন বৃদ্ধিসহ লাভের মাত্রা বৃদ্ধিতে সহায়ক ভূমিকা রাখে। আমরা জানি, বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্প দেশের মোট রপ্তানির (BGMEA, ২০২০) ৮৪.২১% ছিল। যা দেশের জিডিপির ১০.৩৫%।

স্বাস্থ্য প্রচারণার আগে আমাদের ফিল্ড অফিসারদের মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করা।

গুরুত্বপূর্ণ স্বাস্থ্য পরীক্ষাগুলো:

  • রক্তে শর্করার পরিমাণ, রক্তচাপ (বিপি), অক্সিজেন স্যাচুরেশন, শরীরের তাপমাত্রা, ওজন ইত্যাদি।
  • ঝুঁকি আছে এমন স্বাস্থ্য সমস্যাগুলো  আলাদা ভাবে চিহ্নিত করা। 
  • নারী ও পুরুষ কর্মীদের কথা মাথায় রেখে ক্যাম্পেইনগুলোতে নারী এবং পুরুষ উভয়  ডাক্তারের উপস্থিতি  নিশ্চিত করা 

ডাক্তারদের মাধ্যমে পরামর্শ সেশন:

  • স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে আছে এমন স্বাস্থ্য সমস্যাগুলোকে প্রথমে প্রাধান্য দেয়া হয়।
  • নারীদের স্বাস্থ্য সমস্যাগুলো আলাদা করে গাইনোকোলজিস্টের কাছে হস্তান্তর করা হয়
  • উন্নত চিকিৎসা সেবার প্রয়োজন হলে রেফারেল সেবা প্রদান করা হয়। লাইন সুপারভাইজারদের জন্য সাধারণ স্বাস্থ্য সমস্যা ও ডকুমেন্টেশন বিষয়ে স্বাস্থ্য শিক্ষা বিষয়ক সেশন পরিচালনা করা

যোগাযোগের জন্য ব্যবহৃত উপকরণ:

এক ঝলকে স্বাস্থ্য প্রচারাভিযান:

For health & wellness issues consultations about how to conducting health & wellness campaign.

Contact:
Jenna Buttolph
Senior Public Health Analyst
Integral Global Consulting (IGC)
Email: jenna@integralglobal.net

Laila Karim
Director of Programs
AYAT Education
Email: laila.k@ayateducation.com

Scroll to Top